সেপ্টেম্বর মাস। ধুলোবালি পূর্ণ শহর আর ভ্যাপসা গরম। Raiders নামক বাসের ভেতর বসে ঘামছে কয়েকজন লোক, তার মধ্য আমিও একজন।গন্তব্য বহুদূর। তাই বসে বসে ঝুমুচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম পিতা মাতা ছেড়ে এই শহরে আমি কতই না একা বাস করছি। চিন্তার সাথে সাথে মনটা দারুণভাবে বিষিয়ে উঠল। ইদানীং নিজেকে খুব একা মনে হয় কেন তা ঠিক বুজতে পারিনা।
হঠাৎ বাস ব্রেক করায় তন্দ্রাভাব আর এত্তগুলা বিরক্তি নিয়ে সামনের দিকে তাকালাম, উদ্দেশ্য ব্রেক করার কারণ দেখা।
একজন ঘুমন্ত মানুষের মুখে এক বালতি ঠাণ্ডা জল ডাললে সে যেভাবে জেগে উঠে ঠিক সেইভাবে তন্দ্রাভাব কেটেগেল তাকানোর সাথে সাথে। অন্ধকারের মধ্য আলো জ্বলে উঠলে অন্ধকার যেমন হটাৎ করে পালাই তেমনি আমার মনের সকল বিষাদ পালিয়ে গেল। বিরক্তিততে কুঁচকে যাওয়া মুখখানা নিজের অজান্তেই হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। স্বর্গীয় এক সুগন্ধে শরীরের প্রতিটি কোষ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল। ভুলে গেলাম আমি পুরো দুনিয়া, আমি উপলব্ধি করলাম আমার চোখ আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, নেই আমার নিয়ন্ত্রণে আমার মনও। চোখ মন সবই যেন আজ কথা বলছে, চোখ বলছে "এমন রুপ দেখেছি কি জীবনে" মন বলছে "তবে কি আমি এতদিন....
আর ভাবতে হলোনা মধুর মত মিষ্টি সুরের "Excuse Me " ডাকে ভেঙ্গে গেল ভাবনা। "আমি কি আপনার পাশের সিটে বসতে পারি?" বলল সে আবার মিষ্টি কন্ঠে। আমি যেন ভাষা হারিয়ে পেলেছি, হৃদয়ের গভীর থেকে কে যেন সাড়া দিল বলল
"হে অপ্সরা পাশে বসে কর ধন্য আমায়, সিট কেন জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি তোমায়।"
কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ ই বেরুল না।
মেয়েটা আবার বলল "বসতে পারি কি?"
হ্যাঁ, হ্যাঁ বসুননা খালিই তো আছে। বসল মেয়েটা ছোট্ট সিটে আমার গায়ে গা ঘেষে। আমি তখন তার কড়া পারফিউম ও মিষ্টি ঘামের গন্ধে বিভোর হয়ে বসে আছি। বুজতে পারিনি মেয়েটার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি আমি। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো, ৫ সেকেন্ড পর সেই আগের মত মিষ্টি করে বলল "ভাইয়া মুখটা বন্ধ করুন নাহয় মাছি ডুকে যাবে" বলেই একটা ছোট্ট হাঁসি দিল। তার কথায় আমার মুখতো বন্ধ হলো কিন্তু দেহ যেন শুন্য ভাসতে লাগল,,, এত রোমাঞ্চ জীবনে অনুভব করিনি। আমার মনে হল এ যেন হাঁসি নই এ হল "প্রেমবাণ" যার আঘাতে যে কারো কঠিন হৃদয়েও প্রেমের ফুল ফুটতে বাধ্য। আমার নিরিহ মন ও তার বাইরে নই । মেয়েটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম,আমার ধারণা হল মেয়েটার মুখ চন্দ্রের চেয়েও উজ্জ্বল, মেয়েটার চোখ দেখে মনে হল আমি যেন চোখ দেখছি না দেখছি.....
ভাইয়া ভাড়াটা দিন......
আরে একি!!! মেয়েটা আমার কাছে ভাড়া চাইছে কেন?
ভাইয়া ভাড়াটা দিন.....
এ্যা!! মিষ্টি সুরেলা কন্ঠটা এমন পুরুষ পুরুষ লাগছে কেন?
ভাইয়া...উঠুন... ভাড়া... দিন.. (সামান্য ধাক্কা)
ধড়পড়িয়ে উঠালাম, আর ভ্যাবাচেকা খেয়ে হেল্পার এর দিকে তাকিয়ে থাকলাম, পাশের সিটটা খালি ,অথচ এখানেই বসে ছিল আমার প্রেমদেবি, আমার শ্রেষ্ঠ পুলকিত মনের প্রথম প্রেম ।
ভাইয়া ভাড়াটা দিন,,
হেল্পার এর কোন কথায় আমার কানে ডুকছে না,, আমি এখনো মেনে নিতে পারছিনা ওটা স্বপ্ন ছিল, বিশ্বাস করতে পারছি না ওটা প্রেমদেবি নই স্বপ্নদেবি ছিল
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন