বিষ - একটি বিষময় কাহিনী
গতকাল রাতে ছোট ভাইরে ভালো মার্কস পাওয়ার জন্য পড়ার প্রয়োজনীয়তার উপর ইয়া বড় এক মটিভেশনাল লেকচার
দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম পরম নিশ্চিন্তে।
সকাল বেলা বেশ খোশ মেজাজে ঘুম থেকে উঠিলাম। ঘড়ি দেখি মাত্র ১১:৫৭ বাজে। মনে মনে ভাবলাম আহা আমি কতই না কর্মিক মানুষ, কত সকাল সকাল উঠে পড়ি অথচ বন্ধুবর দ্বীপু হালায় ১২ টা অবধি ঘুমায়। নিজেকে কর্মিক ভাবতে পেরে বেশ আনন্দ হচ্ছিল আর সেই আনন্দে ভাবলাম ৭ দিন আগে ধৌত করা শার্ট টা আর ওইযে গত শনিবারে ধুইলাম সেই প্যান্ট টা আরেকবার ধুয়ে পেলি। খুজতে গিয়ে তাহাদের পেলাম আলনার নিচে। যাইহোক এমনি সময় ছোট ভাই হাজির তার রহস্যময় হাসি নিয়ে। অনেক ভেবেও যখন কারণ পাইলাম না তখন জিগাইলাম কাহিনী কি? ভ্যাটকাও ক্যা?
সে গালটারে আরো একটু প্রশস্ত কইরা কইলো অন্তরদা ফোন দিছিলো, তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই আমি ধরছি। কইলাম তো কি হইছে কি কইছে সে যে ভ্যাটকাইতে হইব? সে আবার রহস্যময় হাসি দিয়া কইল তোমাদের রেজাল্ট দিছে আর বড় কথা হইলো তুমি ৩ সাব্জেক্ট ফেইল। শুইনা মনে মনে হার্টএটাক একটা করমু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম । কিন্তু যখন ছোটভাই কইলো ভাই তুমি না কাল আমারে জ্ঞান দিছিলা? নিজেই পাশ করতে পারো না আর আমারে জ্ঞান দিতে আসো? হাহ আগে নিজে পাশ করো তারপর জ্ঞান বিতরণ কইরো। তখন বিশ্বাস করেন সত্যি হার্টএটাক কইরা পালছিলাম কিন্তু কলেজ এর নতুন আসা মাইয়াটা মানে ক্রাশটার কথা ভাবলাম - যে আমি যদি মারা যায় বেচারি এমন স্মার্ট বফ আর পাইবো না তাই বাদ দিলাম চিন্তাটা। হালা ৭ বিষয় এর মধ্য ৮ বিষয় নকল কইরা পাশ কইরা এখন আবার প্যাঁচ লাগাইলো তাও আবার ছোট ভাইরে মান সম্মান আর থাকলো না। মনে মনে অন্তর এর চৌদ্দ গুষ্টিরে গালি দিতে দিতে কাচতে নেয়া জামা প্যান্ট দুইটা পইড়াই বের হইয়া গেলাম বাসা থেইকা কলেজ এর উদ্দেশ্য।
বের হওয়ার পর মনে পড়লো কলেজে তো সিভিল ড্রেসে ডুকতে দিবেনা, আবার ভাবলাম ডুকতে দিবেনা মানে! আমি না এখন কলেজের বড় ভাই :) বুক ফুলিয়ে চলে এলাম কলেজে। দেখলাম বাইরে রেজাল্ট শিট লাগানো আর আমি মাশাল্লা ৩ বিষোয় এ আণ্ডা তখন ৩ ইডিয়ট এর রেজাল্ট নিয়ে বলা কথা গুলো মনে পড়ছিলো বেশ। সত্যি কি এমন ক্ষতি হতো যদি রেজাল্ট টা সরাসরি আমারে ইনবক্স করে দিত আর কাউকে জানাতো না :( ডুকতে যাওয়ার সময় দারোয়ান হালায় কোন রকম ভদ্রতা না দেখিয়েই কইলো সিভিল ড্রেস নট এলাউড। হালায় ইংরেজি শিখছে একখান মনে মনে তারে গালি দিয়ে ভদ্রতার সহিত কইলাম ভাইয়া আমিতো ৭ম সেমিস্টার এর ছাত্র। কিন্তু সে না দমে গিয়া কইলো তো আমি কি করব? আপনার রোল কত? কইলাম ২৮৯৫... হা!হা! বড় ভাই ৩ সাব্জেক্ট ফেইল কইরছেন, সারাবছর এমন বড় ভাইয়ের ভাব না নিয়ে যদি পড়তেন তাইলে আজ ভালো রিজাল্ট পাইতেন। কইয়াই ভ্যাটকানি দিলো একটা, মন চাইছে ধইরা থাপ্পড় দেই কানের নিচে :) হালা দুটাকার দারোয়ান আমারে কিনা জ্ঞান দেয় কিন্তু হটাৎ ক্রাশরে দেইখা ইচ্ছেটা দমন করলাম।
তারে দেখার সাথে সাথে আমার মনের সকল দুঃখ মুছে গেল। সকাল থেকে জমা সব অপমান যেন মিশে গেল কোন এক জাদুর বলে। আমি অনুভব করতে শুরু করলাম আমার মনের শুকনো খড়খড়ে গ্রীষ্মের কঠোর রোদের ফলে ফেটে যাওয়া জমিতে বসন্তের হাওয়া বইছে। মাটি নরম হচ্ছে শত সবুজ মাথা তুলছে।
আমি দেখলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। আহ! কি হাসি! খুব জোরে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল
.
"ওহে প্রেয়সী
বড়ই ভালোবাসি।
প্রেম জেগেছে মনে
দেখে তোমার হাসি,
লাগিয়ে দাও মোর গলে
তোমার প্রেমের ফাঁসি।"
.
তার হাসি দেখে দেখে যখন আমি দিবা স্বপ্ন দেখছিলাম, দেখছিলাম প্রেম, বিয়ে, হানিমুন বাচ্চাকাচ্চা তখনি সে হাজির একদম আমার সামনে। আমার তখন আবার চিৎকার করতে চাইলাম
.
"ওহে প্রেম দেবী একি তোমার রুপ
ওই রুপে পাগল আমি মারতে চাই ডুব"
.
কিন্তু কোন শব্দ করতে পারলাম না শুধু অভ্যাসমত হা করেই রইলাম। সে এসে মধুর চেয়ে মিষ্টি কন্ঠে বললো আপনাকে একটা কথা বলার ছিল চলেন ওইদিকে গিয়ে বসি। আমি তখন আবার চেষ্টা করলাম চিৎকার দিতে
.
"তুমি কোন সৃষ্টি
কন্ঠ কেমনে হয় এত মিষ্টি?
তুমি নও মানুষ হলে অপ্সরী
তুমি আমার বরবটি তুমি ভূনা খিচুড়ি "
.
কিন্তু এইবার ও আমি পারলাম না যাইহোক তার পিছু পিছু চললাম আর দেখিতে লাগিলাম রুপের ঝলক। এক জায়গায় এসে সে বসলো আমায় ও বসতে বললো। বসার পর বললো আচ্ছা ভাইয়া আমাকে আপনার কেমন লাগে??
আহা! কি মধুর প্রশ্ন! এই প্রশ্ন শুনার জন্য আমি সাতবার জন্মাতে পারি। আবেগে আপ্লুত হয়ে বললাম
"তোমার কথা ভাবতে আমার ঠিক সেই পরিমাণ ভালো লাগে যেই পরিমাণ দূরত্ব মহাকাশের মহাশুন্যর মধ্য বিদ্যমান। তোমার চোখ যখন দেখি তখন আমার চোখে দুনিয়া কুৎসিত কদাকার হয়ে যায়, ভেবে পাইনা স্রষ্টা কেন সবকিছু অমন সুন্দর করে বানায়নি। তুমি যখন হাসো আর আমি দেখি তখন আমার মনে হয় আমি হাসি দেখছিনা দেখছি স্বর্গ, দেখছি অপ্সরী, দেখছি লাল নীল হলুদ সাদা হাজারো পরী। আমার তখন মনে হয় ওই হাসি দেখার জন্যই আমার জন্ম। কখনোবা মনে হয় ওই হাসিতে দুনিয়া সৃষ্টির রহস্য লুক্কায়িত। বুকের বাম পাশে চিন চিন করে দেখলে শুধু ওইটুকুই বলতে পারি তোমার রক্ত জবা ঠোঁটের ব্যাপারে। তুমি হয়ত জানো না সেই কালে যদি জন্মাতে তবে গ্রিক পুরাণ তোমায় কুন্তলা দেবী বলত তোমার ওই কুচকুচে কালো চুলের জন্য। কি তার মিষ্টি গন্ধ আহ! মন চাই চব্বিশ ঘন্টা ওই চুলে মুখ লুকিয়ে ঘ্রাণ নেয়। যখন তোমার ওই রুপ দেখি তখন আমি চিন্তার সমুদ্রে ডুব দেই ত্রিভুবনে সৃষ্ট কেবল একটি মাত্র বস্তুর আশায় যার সাথে তুলনা করা যায় তোমার রুপকে কিন্তু আমি সর্বদা ব্যর্থ হই কারণ তুমি যে সুন্দরীদের সুন্দরী বেহেস্তের হুর পরী যার বসবাস আমার মত প্রেমিকদের মনে। একবার নদীর ধারে গিয়েছিলাম রাত্রের আকাশে হেলানো ছিল তখন পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের জোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে তোমার কথা ভাবছিলাম, ভাবছিলাম তোমাদের মাঝে কতই না মিল, তোমার শরীর থেকে হয়ত জোৎস্না ছড়ায় না কিন্তু তুমি তো জোৎস্না ধারণ কর নিজের অভ্যন্তরে, তুমি তো তোমার জোৎস্নায় ওই চন্দ্রের ন্যায় উদ্ভাসিত। কিন্তু এক খন্ড মেঘ এসে চিন্তায় বাঁধা দি...."
হইছে হইছে "ভাইয়া" আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আসলে আমি একটা রিসার্চ করছি। কলেজ ম্যাগাজিনে একটি আর্টিকেল লিখব "শেষ বেঞ্চে বসা একটি ছেলের চোখে একজন সুন্দরী মেয়ে যেমন" তাই আপনার কাছ থেকে ব্যাপার টা জানতে চাওয়া। আমায় সাহায্য করার জন্য ও সময় দেয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
বলে হাটা ধরলো আর আমি দেখছিলাম সকাল থেকে ঘটা এক এক করে সকল কাহিনী, সকল ব্যর্থতা। তার আবির্ভাবে যেমন সব দুঃখ উদাও হয়েছিলো তার আচরণ ও বিদায় দেখে সব শতগুন শক্তিশালী হয়ে এসে আমার দূর্বল হার্টকে মারুফের ভাষায় অত্যাচার শুরু করছে, রাগে দুঃখে শোকে বাজার থেকে বিষ কিন্না নিয়া অন্তরদের বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম। ওখানে গিয়া খামু যাতে আমি মরলে পুলিশে ওরে ধরে হালা হারামখোরটার জন্যই এত কষ্ট।
হাছিবুল মাওলা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন