টয়লেট আমার সবচেয়ে প্রিয় স্থান গুলোর মধ্য অন্যতম। নিউটনের আপেল পড়ার কাহিনী শুনার পর লোভে পড়ে নিজ মাথায় কাঁঠাল পরবে এই আশায় প্রিয় স্থান বানিয়েছি ভেবে কেউ লজ্জায় পেলবেন না। আসলে এর পিছনে কিছু পারিবারিক ইতিহাস আছে। ছোটবেলায় সবাই ই আদর পাই, পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় আমি একটু বেশি পাইতেছিলাম। কিন্তু এই আদর কপালে বেশিদিন জুটলো না। জীবনে হাজির হল পড়ালেখা নামক বিভীষিকা।😭
যেই মা কোনদিন একটু রাগ করে কথাও বলে নি, সব দুষ্টুমি নিরবে সয়েছে সেই মা ও একদিনে বদলে গেল😲 সামান্য অ আ এর জন্য কিনা মার খেলাম! সেদিন থেকেই পড়ালেখা আমার ঘোর শত্রু হয়ে গেছিল। বিচানা ছাড়বার পর থেকে আবার বিছানায় পেরার আগ পর্যন্ত পড়ালেখারে সেই যাবত শেখা সব গালি দিততে থাকতাম।
সকাল বেলা উঠেই মা পাঠাতো ওয়াশরুমে, বের হলেই আরবি পড়া, এরপর স্কুলের পড়া, এরপর স্কুল। জীবনটা তেতো হয়ে উঠেছিল। একদিন সকালে উঠে যখন টয়লেটে গেলাম আর ঝুরে ঝুরে ভাবছিলাম অতিত ইতিহাস আর পড়ালেখার ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করতেছিলাম তখনি পাই এক অসাধারণ, ঝকঝকে (আমার ভাষায়) বুদ্ধি। ভাবলাম যদি আমি দেরিতে বের হই এখান থেকে তাহলে কি হবে? সামান্য পড়তেই স্কুলের সময় হয়ে যাবে, আহা! আর বসে বসে অই বিরক্তিকর পড়ালেখা করা লাগবেনা। যেই ভাবা সেই কাজ এক বসায় পুরো ১৫ মিনিট পার, মা যদিও একবার ডেকে গেছিল।
সে যাই হোক সেদিন থেকে আমার টয়লেট প্রেম শুরু হয়। আর দিন দিন এই সময়টাও বাড়তে থাকে আর কমতে থাকে পড়ার সময়। মায়ের কানমলা যদিও খেয়েছি অনেকবার কিন্তু মনকে বুজিয়েছি তা চিরুনির আঘাত, পাখার লাঠির আঘাত ইত্যাদির চেয়ে নেহাৎ ই কম।
একদিন দুইটা ইংরেজি শব্দ শিখেছিলাম peace=শান্তি আর time=সময়, সেদিন আমার এই টয়লেটে কাটানো সময়ের নাম দিয়েছিলাম পিচ টাইম বা শান্তির সময় হিসেবে।
সে যাইহোক, একদিন হঠাৎ করে পিচ টাইম বাড়িয়ে দিলাম ৩৫ মিনিট এ। ফলটা হল ভয়ঙ্কর, খোজ না পেয়ে সবাই খোজ লাগালো হারিয়ে গেছি ভেবে, পানিতে পড়েছি ভেবে জাল নিয়ে নেমে ও গেল কয়েকজন, যখন বের হইছি তখন দেখলাম বাড়িটা যেন অন্যরকম, মা কাঁদছে, পাড়া প্রতিবেশি হাজির। শুনলাম এক দাদি মাকে কোন খনকার(অলৌকিক খমতাধর কবিরাজ) এর কাছে যেতে বলছে, সে নাকি বলে দেবে আমায় কোন কল্লা কাটা(কিডন্যাপার জাতীয় কিছু) নিয়ে গেছে। আমি বের হয়ে আস্তে আস্তে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম পরিচিত সবাই ভূত দেখার মত চমকে উঠে কেমন করে তাকিয়ে আছে। মা ও প্রথম অমন ভাবে তাকালেও পর মুহূর্তে আমায় ধরে গগনবিদারী কান্না শুরু করে দিয়েছিলেন। আমি ভোঁদাই এর মত তাকাইয়াই ছিলাম শুধু।
পর মুহূর্তে শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ। কই ছিলাম? কি করছিলাম? কেউ আমায় লুকিয়ে রেখেছিল কিনা? কারো দেয়া কিছু খাইছিলাম কিনা? প্রশ্নের পর প্রশ্ন হচ্ছিল আর আমি সেই একই ভাবে তাকাইছিলাম। পরে যখন বললাম আমি টয়লেটে ছিলাম সবাই এবার অন্য দৃষ্টিতে তাকাইলো প্রশ্নের ধাঁচ ও বদলে গেল। বলল, যে লুকাই রাখছিলো তার দাঁত কেমন? মাথায় শিং আছে তাইনা? চোখ লাল লাল?ইয়া লম্বা লম্বা কানের লতি? তখন এসবের কিছু না বুঝলেও পরে বুঝেছিলাম আমায় নাকি টয়লেটে ও খুঁজেছে পায়নি😲 মুরুব্বিরা বলে বাচ্ছাদের সাথে নাকি কি থাকে(অদৃশ্য) যা তাদের লুকিয়ে রাখে, আমায় ও নাকি তারাই লুকিয়ে রেখেছিল 👏👏👏
যাইহোক এর সমাধান আজো হয়নি কিন্তু এর পর কিছুটা শুধরেছিলাম মানে পিচ টাইম কমিয়েছিলাম...
অনেকদিন পার হয়ে গেছে
এখন কলেজে পড়ছি সেই অভ্যাস পুনরায় গড়েছি বহুদিন হল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হোস্টেলের টয়লেট নিয়ে, এটায় ২০ মিনিট যেতে না যেতেই হালারা(বন্ধুরা) দরজা পেটানো শুরু করে। বুঝিনা এই গন্ধযুক্ত টয়লেটে ডুকার জন্য ওদের এত আগ্রহ কেন 😜
এখন টয়লেটে বসে বসে এই স্বইতিহাস টা লিখছি আর দেখুন কোন হালায় যেনো অসময়ে ডিস্টার্ব শুরু করছে, গত পাঁচ মিনিট যাবত দরজা পিটিয়েই চলছে। এদের একটু ও ধৈর্য নেই, মাত্র ৪৫ মিনিট হইছে বাথরুমে ডুকেছি, একটু অপেক্ষা ও করতে পারেনা। এগুলারে মানসিক ডাক্তার দেখানো উচিত 😎
যাইহোক আজ এই পর্যন্তই😊
একটা হিসাব বাকি আছে ওইটা শেষ করেই বেরিয়ে যাব আশা করি😊
...
কাহিনী পুরোটা রঞ্জিত নহে😊
..
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন